नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।
প্রবীর রায় | তামিলনাড়ু
কিছু মানুষ ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ, কিন্তু কিছু মানুষ আছে যারা নিজেরাই ইতিহাস তৈরি করেন। এটি দক্ষিণ ভারতে
প্রতিকূল পরিস্থিতিতে কাজ করে ইতিহাস সৃষ্টিকারী এক যুবকের গল্প। সঙ্ঘে সুরুজি
নামে পরিচিত প্রয়াত সূর্যনারায়ণ রাও-এর জীবন, সেবার নতুন ধারণা প্রদানের সাথে সাথে স্বয়ংসেবকদের
পুরুষার্থের মধ্যে সমবেদনার ভাব প্রস্ফুটিত করার অনন্য কাহিনী।
২০শে আগস্ট ১৯২৪ সালে কর্ণাটকের মহীশূরে জন্মগ্রহণ করেন। মহীশূর ইনস্টিটিউটের সেক্রেটারি কোরাটাগেরে কৃষ্ণাপ্পার স্ত্রী সুন্দরম্মা যখন তাদের প্রথম সন্তানের জন্ম দেন, তখন তারা জানতেন না যে এই সন্তান এতটা বিখ্যাত হবে। শৈশবে সুরুজি সঙ্ঘের দ্বিতীয় সরসঙ্ঘচালক গুরুজী গোলওয়ালকরের সান্নিধ্য পান। গুরুজী যখনই কর্ণাটকে প্রবাসে আসতেন, এই বাড়িতেই থাকতেন। তার দেশভক্ত পিতামাতার দেওয়া নিত্য সংস্কারের কারণেই গণিতে সাম্মানিক স্নাতক উত্তীর্ণ হওয়ার পরেই ২২ বছর বয়সে সঙ্ঘের প্রচারক বের হন। তামিলনাড়ুতে বিচ্ছিন্নতাবাদী শক্তির সার্বিক প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে সাধারণ মানুষের মধ্যে সামাজিক সমরসতার বীজ বপন করেন। সঙ্ঘের প্রথম অখিল ভারতীয় সেবা প্রমুখ হিসাবে তিনি ১০ বছর দ্বায়িত্ব পালন করেন এবং শুধুমাত্র স্বয়ংসেবকদের সেবার সাথে যুক্ত করেননি বরং সারা দেশে সেবা কাজের জন্য একটি কার্য যোজনাও তৈরি করেন। 'এক শাখা এক সেবা' এই মন্ত্র দিয়ে তিনি রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘে সেবা বিভাগ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
দীর্ঘ প্রচারক জীবনে তিনি বহু দায়িত্ব পালন করলেও যে বিশেষ ভূমিকার আলোচনা
করছি, তা হল তাঁর সুদক্ষ সংগঠন
কুশলতা, যা সারা দেশেই ভীষণ ভাবে
প্রভাব বিস্তার করেছিল। ১৯৭২ সালে সূর্যনারায়ণ রাও জী যখন তামিলনাড়ুর প্রান্ত
প্রচারকের দায়িত্ব পান সেইসময় ভাষাগত বিচ্ছিন্নতাবাদ চরম পর্যায়ে ছিল। তামিল
জানতেন না, কিন্তু তামিল ভাষা শিখে
সমাজের প্রত্যেকটি শ্রেণীর মানুষকে সঙ্ঘকার্যের সাথে যুক্ত করতে সমর্থ হন। ১৯৮৪
সাল অব্দি নিরন্তর ১৩ বছর ধরে তামিলনাড়ুর প্রান্ত প্রচারক রূপে রাষ্ট্রভক্ত
যুবকদের মধ্যে পুরুষার্থ জাগরণের পাশাপাশি সামাজিক সমরসতা গড়ে তুলতে অনবরত
প্রচেষ্টা চালিয়ে যান। ওনার সম্বন্ধে বলতে গিয়ে বিগত ১২ বছর সরকার্যবাহের
দায়িত্ব পালনকারী মাননীয় ভাইয়া জী জোশী বলেন, সূর্যনারায়ণ রাও জী একদিকে তিনি সমাজে আত্মমর্যাদা জাগ্রত
করার চেষ্টা করেন অপরদিকে দলিত পুরোহিতদের প্রশিক্ষণ দিয়ে মন্দিরের দরজা সকলের
জন্য খুলে দেন। যে সমাজ থেকে মানুষ সাধারণত দূরত্ব বজায় রাখত, যখন তারা পুরোহিত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হলে সমাজের
দৃষ্টিভঙ্গিই বদলে যায়। এটা সত্যি যে, বিচ্ছিন্নতাবাদ সেখানে শিকড় গাড়ে যেখানে মানুষের মধ্যে দূরত্ব বাড়ে।
মন্দিরের দরজা যখন সবার জন্য খুলে গেল, তখন এই সম্প্রীতির পরিবেশ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের শিকড়কেও দুর্বল করে দেয়।
সূর্যনারায়ণ রাও জীর সাথে অখিল ভারতীয় সহ সেবা প্রমুখ রূপে থাকা ভাইয়া জী জোশীর
মতে, সুরুজীর জীবনে স্বামী
বিবেকানন্দের চিন্তাধারার গভীর প্রভাব ছিল। স্বামী বিবেকানন্দের বাণী "নর
সেবা, নারায়ণ সেবা"-কে
মূলমন্ত্র হিসাবে গ্রহণ করে, তিনি স্বয়ংসেবকদের বলতেন যে কাউকে লৌকিক সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা
একটি ছোট স্তরের সেবা, সেবিতদের পূজা করে ভগবান
রূপে সেবা করা উচিৎ। প্রত্যেক সেবিতকে সেবক বানানোই প্রকৃত সেবা। নিজের সহজ সরল স্বভাবের কারণে তিনি প্রতিটি কার্যকর্তাকে আপন মনে করতেন, সে কারণেই তিনি স্বয়ংসেবকদের মন-মস্তিষ্কে এই
ধারণাগুলিকে প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছিলেন।
১৯৯০ সালে, সূর্যনারায়ণ রাও জী যখন
প্রথম অখিল ভারতীয় সেবা প্রমুখের দায়িত্ব গ্রহণ করেন, তখন সেবা বিভাগ সঙ্ঘের একটি নতুন প্রয়োগ ছিল। যে কোনো
বিষয়ে বাস্তব প্রয়োগ সবসময়ই একটা চ্যালেঞ্জের, আর চ্যালেঞ্জ নেওয়াটা ছিল সুরুজীর স্বভাবগত। তিনি
কার্যকর্তাদের যে কোন নতুন বিষয়ে প্রয়োগ
করার পূর্ণ স্বাধীনতা দিতেন, সম্ভবত সেই কারণেই সঙ্ঘের
প্রথম অখিল ভারতীয় সেবা প্রমুখ হিসাবে তাঁর কার্যকালে, সেবা বিভাগের কাজও অনুরূপ গতি প্রাপ্ত হয়েছিল। 'সংস্কার কেন্দ্র সমগ্র বস্তির পরিবর্তনের
মাধ্যম হয়ে উঠবে' সূর্যনারায়ণ রাও জীর এই
পরিকল্পনা আজ সারা দেশে চলা সংস্কার কেন্দ্রগুলির দ্বারা ইতিবাচক পরিবর্তনের
ভিত্তি হয়ে উঠেছে। সঙ্ঘের সচল মূর্ত অভিলেখাগার (আর্কাইভ) রূপে সূর্যনারায়ণ রাও
জী ছিলেন একজন প্রখর বিদ্বান ব্যক্তি। তার ছত্রছায়ায় উঠে আসা ... দক্ষিণ ক্ষেত্রের
সহ-বৌদ্ধিক প্রমুখ, গোবিন্দ জী বলেন, সূর্যনারায়ণ রাও জীর হিন্দী, ইংরেজি এবং তামিলের উপর যথেষ্ট দখল ছিল। সুরুজী
যেখানেই বুদ্ধিজীবীদের মধ্যে সঙ্ঘকার্যের ব্যাখ্যা করতে গিয়েছিলেন, সেখানেই তিনি সাবলীল ইংরেজিতে বিষয়বস্তুকে এমন
কার্যকরী উপস্থাপন করতেন যে সেইসব বিদ্বানবর্গকে সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত করতে
অনেকাংশেই সফল হতেন। সূর্যনারায়ণ রাও জী তার প্রবাসের সময় সবসময় বাল্মীকি সমাজের
কোন স্বয়ংসেবকের বাড়িতে ভোজন করতেন। বিশেষ করে মেথর সম্প্রদায়ের লোকেরা, যাদেরকে সমাজ সর্বদা অস্পৃশ্য মনে করত, তিনি সেসব বাড়িতে পরম আনন্দের সাথে ভোজন
করতেন। তিনি স্বয়ংসেবকদের বলতেন, ছোটবেলায় মা যেমন করে
আমাদের নোংরা পরিষ্কার করেন, তেমনই এই সমাজও আমাদের ঘর
বাড়ি পরিষ্কার রাখে। আমরা কি আমাদের মাকে অস্পৃশ্য মনে করি? আমাদের তো তাদের কাছে ঋণী হওয়া উচিৎ। তিনি এই সমাজকে বাকি সমাজের মধ্যে সম্মানের সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে সার্থক প্রচেষ্টা করেছিলেন।
১৯৮৯ সালে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ আদ্য সরসঙ্ঘচালক ডাক্তারজীর জন্ম
শতাব্দী পালনের পরিকল্পনা করে এবং সেই বিশাল আয়োজনের জন্য প্রচুর অর্থের আবশ্যকতা
অনুভব করে। সেবা কাজের বিস্তারের জন্য অর্থের ব্যবস্থা করা, সেসবের আইনি বিষয় সুব্যবস্থিত করতে সূর্যনারায়ণ রাও জীর
ট্রাস্ট তৈরি করার পরিকল্পনাই পরবর্তীতে ২০০৩ সালে গিয়ে রাষ্ট্রীয় সেবা ভারতীর
জন্ম দেয়। এই অর্থ কোথায় ব্যয় হচ্ছে ও তার কী ফল পাওয়া যাচ্ছে, তার বিবরণ সমাজের কাছে পৌঁছানোর জন্য সুরুজীর
পথনির্দেশে 'সেবা-দিশা' পত্রিকার প্রকাশনা শুরু করা হয়। টানা ১০ বছর
অখিল ভারতীয় সেবা প্রমুখ থাকাকালীন, তিনি দেশের প্রতিটি কোণে ভ্রমণ করেছিলেন এবং "সেবা হ্যায় যজ্ঞ কুণ্ড,
সমীধা সম হম জ্বলে" বার্তাটি সর্বত্র
ছড়িয়ে দিতে থাকেন। সেবা বিভাগের লাগাম সময়মতো পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দিতে
হবে, এই ধারণা বাস্তবায়নে
সুরুজী নিজেই ৭৫ বছর বয়সে দায়িত্ব থেকে অবসর চেয়ে নেন।
একজন মহান সংগঠক, একজন বিদগ্ধ চিন্তাবিদ,
একজন অতুলনীয় সম্পর্ক স্থাপনকারী এবং একজন
সুযোগ্য নেতৃত্ব প্রদানকারী কার্যকর্তা রূপে মাননীয় সূর্যনারায়ণ রাও জী তার
মৃত্যুর কয়েক বছর আগে পর্যন্ত কেন্দ্রীয় টোলির সদস্য ছিলেন এবং যতদিন পর্যন্ত স্বাস্থ্য ভালো ছিল, ততদিন পর্যন্ত দক্ষিণ ভারতের প্রতিটি সঙ্ঘ
শিক্ষা বর্গে উপস্থিত থেকে তিনি
স্বয়ংসেবকদের দিশা নির্দেশ করতেন। ১৯ শে নভেম্বর ২০১৬-এ বেঙ্গালুরুর অ্যাপোলো
হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার দুই সপ্তাহ আগেও তিনি স্বয়ংসেবকদের সাথে দেখা
করে সঙ্ঘের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে আলোচনা করে গেছেন।
नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।