नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।
প্রবীর রায় | ভারত
বাড়ি ফিরে আসা শ্রমিক ভাইয়েরা যেন ক্ষুধার্ত
না থাকে সে দিকেও স্বয়ংসেবকরা লক্ষ্য রেখেছিল।
রামবতীর চোখ থেকে কৃতজ্ঞতার অশ্রু ঝরছিল, কেননা গত তিন দিন ধরে সন্তান ও স্বামীকে সেদ্ধ ভাত
খাওয়ানোর পর সে প্রায়ই অভুক্ত অবস্থাতে ঘুমিয়ে পড়ত। অভাবের তাড়নায় আশেপাশের
গাছ থেকে সজনে তুলে বিক্রি করে যে আয় হত তা দিয়ে তিন সন্তান এবং
শ্বশুর-শাশুড়িকে খাওয়াবে কী করে? লকডাউন শুধু তার স্বামীর
কাজ নয়, পরিবারের অন্নও কেড়ে
নেয়। সেবাভারতীর কার্যকর্তারা ভোপালের
গোবিন্দপুরা, সেক্টর-সি-এর কাছে একটি
ঝুপড়ি বাড়িতে বসবাসকারী এই পরিবারটির কাছে যখন ঈশ্বরের দূতের মতো রেশন সামগ্রী
নিয়ে পৌঁছেছিল, তখন রামবতী আনন্দে
আত্মহারা হয়ে কেঁদেছিল। সেবাভারতীর একজন পূর্ণকালীন কার্যকর্তা করণ সিং বন্দোবস্ত
করে দেন যাতে আড়াই মাসের এই লকডাউনের সময় এই পরিবারটি খাবারের অভাবের না হয়।
পিপিই কিট পরে সমগ্র দেশ জুড়ে স্বয়ংসেবকরা
ডাক্তার এবং প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে অংশ নেয়।
একই সময়ে, কলকাতার বাগবাজারের একটি
বহুতল ভবনের নীচে ঝুড়ির উপর কয়েকটি বাসন রেখে, শুকনো খাবার খেয়ে থাকা একজন বৃদ্ধ মায়ের জন্য লকডাউনের সময়
বছরের পর বছর ঘরে রান্না করা গরম খাবার নিয়ে আসে সঙ্ঘের এক স্বয়ংসেবক। বস্তি থেকে
পাড়ায় খাবার বিতরণের পর একদল স্বয়ংসেবক ডাল-ভাত বিতরণ করে ফুটপাথ এবং রেললাইনের
কাছে ভিক্ষাবৃত্তি করে বসবাসকারী লোকদের সন্ধান করতে বেরিয়েছেন, যখন তারা এই মাকে এক কোণে দেখতে পান। কয়েকদিন
সন্ধ্যায় সবজি ভাত খাওয়ার পর মা মনোরমা দিনের বেলা খাবার চাইলেন, তখন পাশেরই এক স্বয়ংসেবক সুমিত সাহু তার বাড়ি
থেকে নিয়মিত গরম খাবার পৌঁছে দিতে শুরু করেন। একদিন, স্বয়ংসেবকদের আশীর্বাদ করার সময়, এই বয়স্ক মহিলা তার দুর্দশার বর্ণনা করে বলেন, কীভাবে ১০ বছরে প্রথমবার তিনি ঠিক মতো খেতে
পেরেছেন। এতদিন মুড়ি বা চিড়ে জলে ভিজিয়ে খেয়ে কোনোমতো সে তার জীবনযাপন করতেন।
কিছু জায়গায় খাবারের প্যাকেট, কিছু জায়গায়
রেশনের প্যাকেট, কিছু জায়গায় প্লেটে করে খাবার পরিবেশন করে
স্বয়ংসেবকরা। করোনার মতো বৈশ্বিক মহামারীকেও সেবা করার সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করে
স্বয়ংসেবকেরা।
এখন ইন্দোরের কথা বলা যাক, যা করোনা ভাইরাসের
সবচেয়ে বড়ো হটস্পট হয়ে উঠেছিল। এখানকার রেলস্টেশনের কাছে ইলাইট টাওয়ারের নিচে
বসবাসকারী মঞ্জু আগরওয়ালের মায়ের আকস্মিক মৃত্যুর পরে যখন তার পরিবারের কেউ বা
প্রতিবেশীদের কেউ সাহায্য করতে এগিয়ে আসেনি, তখন সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা তার শেষকৃত্য সম্পন্ন করেন।
রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা করোনার সময় মহাবিশ্বে প্রবহমান এই
সেবার গল্পের স্থপতি। যারা এই বৈশ্বিক মহামারীকে সেবা করার একটি সুযোগ হিসাবে
বিবেচনা করে চেতনা নিয়ে মুম্বাই, দিল্লি এবং ইন্দোরের
হটস্পট এলাকা সহ সারা দেশে অবিরাম সেবা চালিয়ে গেছিলেন। বারাবাঙ্কি জেলার
কার্যবাহ অজয় কুমারের আত্মত্যাগ ভুলতে পারা অসম্ভব। শুক্রবার, ২২ মে, লক্ষ্ণৌ-অযোধ্যা হাইওয়েতে রেশন বিতরণ করার সময় তিনি একটি
ট্রাক দুর্ঘটনার শিকার হন। অজয় বাবু, পেশায় একজন প্রাথমিক শিক্ষক, গত ৫৫ দিন ধরে সকাল ১০ টা থেকে ৯ টা পর্যন্ত অভাবগ্রস্ত
লোকদের জন্য তৈরিকরা খাবার এবং শুকনো রেশনের প্যাকেট বিতরণ করছিলেন। একজন অভাবী
ব্যক্তির জন্য তার গাড়ির ডিক্কি থেকে রেশন প্যাকেট বের করতে গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার
শিকার হন তিনি।
পরিসংখ্যানের দিক থেকে সঙ্ঘের অখিল ভারতীয় সেবা প্রমুখ পরাগ অভ্যঙ্কর মহাশয়
বলেন, ৫ জুন, ২০২০ পর্যন্ত, রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘ এবং সেবা ভারতীর মাধ্যমে, ৯২,৬৫৬ জায়গায় ৭,৩৮,০১,৮০২
অর্থাৎ ৭৩ লক্ষ রেশন প্যাকেট এবং ৪ কোটিরও বেশি প্যাকেট জাত খাবার বিতরণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, স্বয়ংসেবকরা সেবাকাজ কে
তাদের কর্তব্য মেনে প্রতিনিয়ত সেবামূলক কাজে নিজেদের নিয়োজিত রাখেন।
বিশ্বের বৃহত্তম স্বেচ্ছাসেবী সংস্থা বিশ্বের বৃহত্তম মহামারীর বিরুদ্ধে লড়াই
করতে প্রশাসনের সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে। করোনা থেকে রক্ষা পেতে মাস্ক
কিনতে পারেননি এমন ৯০,০২,৩১৩ জনকে মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে এবং লকডাউনে
আটকে পড়া ১,৯০,০০০ মানুষকে আশ্রয় দেওয়া হয়েছে। এমন কোন
আয়াম ছিল না যেখানে সঙ্ঘের স্বয়ংসেবকরা সেবা কাজ করার জন্য অপ্রস্তুত ছিল। তা
সে পিপিই কিট পরে ডাক্তারদের সাথে
স্ক্রিনিংয়ের জন্য বের হওয়া তরুণ স্বয়ংসেবকেরাই হোক বা রাষ্ট্রীয় সেবিকা সমিতির
বোনেরা যারা গর্ভবতী মায়েদের পুষ্টি নিয়ে গভীরভাবে যত্নশীল ছিল। এটি একটি অবিরাম
চলতে থাকা যাত্রা ছিল।
রাষ্ট্রীয় সেবাভারতীর সাধারণ সম্পাদক শ্রবণ কুমার, যিনি রাষ্ট্রীয় সেবা ভারতীর ২৪ ঘন্টা
হেল্পলাইনে সাহায্য চাওয়া অভাবী পরিবারগুলির ব্যবস্থা দেখেন। তিনি বলেন যে আমরা
তাদেরও দুর্দশার কথা শুনেছি যারা কিছু বলতে পারেনি। আমাদের দল যমুনা পার্ক, দিল্লি ও পুনের রেড লাইট এলাকায় যৌনকর্মীদেরও
নিয়মিত রেশন বিতরণ করা হয়। ইন্দোরে ক্রমবর্ধমান করোনা সংকটের মধ্যে যখন পুলিশ
কর্মীদের বিশ্রাম দেওয়ার সময় আসে, তখন স্বয়ংসেবকরা
ব্যারিকেডগুলির নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব নেন।
সঙ্ঘের এই সেবা কাজের যাত্রা “হরি অনন্ত হরি কথা অনন্ত”-এর আদলে চলতে থাকবে, সেবা দূতের আরও কাহিনী পড়ুন পরবর্তী সংখ্যায়।
नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।