नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।
বিজয়লক্ষ্মী সিংহ | মহারাষ্ট্র
২০০৩ সালের ২৬ শে জানুয়ারিতে সেবাভারতীর শিশু বিদ্যামন্দিরের বার্ষিক উৎসবের একটি দৃশ্য দেখেছিলেন শ্রীমতি বিমলা কুমাবত, ৬২ বছর বয়সে বিমলা কুমাবত ওই দিনটিকেই তার জন্মদিন মনে করেন। যদিও সেটিকে জন্মদিন না বলে পুনর্জন্মদিনই বলা ভালো। আসলে ব্যাপারটা হল, বহু পুরনো লোকের মত বিমলা কুমাবতেরও সঠিক জন্ম তারিখ মনে নেই। তবে তার সেই দিনটি খুবই ভালো করে মনে আছে যেই দিনে সে সংঘের বরিষ্ঠ প্রচারক শ্রী ধনপ্রকাশ ত্যাগী জীর প্রেরণায় নিজের বাড়ির কাছেরই বাল্মিকী বস্তি থেকে ঝাড়ুদার সমাজের পাঁচটি বাচ্চাকে পড়ানোর জন্য নিজের বাড়িতে নিয়ে এসেছিলেন। তিন ছেলে বৌমা ও নাতি-নাতনিদের নিয়ে ভরা সংসার বিমলা কুমাবতের। অষ্টম শ্রেণী পাস বিমলা দেবী ৪৮ বছর বয়সে সেই বাচ্চাগুলোর জীবন পরিবর্তন করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। বাচ্চাগুলি ময়লা পরিষ্কার করে যেই পয়সা রোজগার করত তার থেকে কিছু পয়সা দিয়ে নেশা করত ও বাকি পয়সা সংসার চালানোর জন্য সাহায্য করত। মেথরদের এই বস্তির অবস্থা খুবই খারাপ ছিল। বস্তির চারপাশে ভীষণ নোংরা ছোট ছোট ঝুপড়ির মধ্যে শুয়োরদের সাথেই বাচ্চারা বড় হচ্ছে, প্রত্যেক বাবা-মায়েরাই নেশাগ্রস্ত। এই পরিস্থিতিতে বাচ্চাগুলির পড়াশোনার কথা কে ভাববে? তবুও বিমলা দেবী ঈশ্বরের দূতের মত তাদের জীবনে এসেছিলেন। বাচ্চাদের নাক পরিষ্কার করে দেওয়া, নখ কেটে দেওয়া থেকে শুরু করে তাদের সংস্কারিত ও শিক্ষিত করার কাজ শুরু করে দিলেন। এই সাধারণ গৃহিণীর অদ্ভুত সংকল্প নিঃস্বার্থতা সেবা ভাব ও নিরন্তর পরিশ্রমের ফলে এই বাচ্চা গুলির জীবনের দশা ও দিশা দুটিই পরিবর্তন করে দিয়েছিল। সেবাভারতীর কার্যকর্তাদের সাহায্যে বিমলা দেবীর বাড়িতে চলতে থাকা এই ক্লাস ধীরে ধীরে সেবাভারতী শিশু বিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হয়ে গিয়েছিল যেখানে আজ ৪০০ এর বেশি বাচ্চা পড়াশোনা করে।
আসুন পরিচয় করাই শিবানীর সাথে, যে এখন দ্বাদশ শ্রেণীর ছাত্রী। এই মেয়েটি আজও সেই দিনের কথা ভোলেনি, যেদিন বিমলা দেবী তাকে তার ছোট বোনের সাথে ছাত্রাবাসে নিয়ে এসেছিল। বাবা মায়ের মৃত্যুর পর এই দুই বোন কাকু-কাকিমার সাথে একটি ছোট ঝুপড়িতে তাদের বাচ্চার সাথে একই সঙ্গে থাকত। তারা যখন এই ছাত্রাবাসে এসেছিল তখন বোনের পায়ের ঘায়ে পোকা জন্মে গিয়েছিল, তবুও শিবানী সবার সাথে খুব লড়াই করেছিল কারণ সে এখানে আসতে চাইছিল না। তবে গত বছর মাধ্যমিকে ৬২% নম্বর পাওয়ার পরে সে নিজের দিদিমাকে অর্থাৎ বিমলা দেবীকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে কেঁদেছিল। সে দিদিমার সম্পর্কে একটি কবিতাও লিখে ফেলেছিল।
এখন বলব লোকেশ কোলীর কথা। বি.কম. তৃতীয় বর্ষের ছাত্র লোকেশ পড়াশোনার পাশাপাশি সে এখন শিশু বিদ্যালয়ে পড়ায়ও। লোকেশ খুব সুন্দর বাঁশিও বাজায়। লোকেশের বাবা মৃত, বিধবা মা ও তিন ভাই বোনের মধ্যে সবচেয়ে বড় লোকেশকে বিমলা দেবী পড়াশোনার জন্য যখন জবরদস্তি ধরে নিয়ে এসেছিল তখন লোকেশের বয়স মাত্র ৮। আবার বি.এ. প্রথম বর্ষের ছাত্রী লক্ষ্মীকে অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষা দেওয়ানোর জন্য বিমলা দেবী নিজেও ৫২ বছর বয়সে অষ্টম শ্রেণীর পরীক্ষা দ্বিতীয়বার দেন। এরকম কত ঘটনাই এখানে খুঁজলে পাওয়া যাবে।
এই কাজটি যতটা দেখা যায়, তার থেকে কাজটা অনেকটাই কঠিন। প্রথমে তো এই বাচ্চাদের বাবা মায়েরা তাদেরকে পড়াতে পাঠাতে রাজি ছিল না। আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক বেছে যে ১৫-২০ টাকা উপার্জন করত এই বাচ্চাগুলি সেটি তাদের পড়াশোনার থেকেও বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। অনেকবার বোঝানোর পরে তারা এই শর্তে রাজি হয়েছিল যে বাচ্চারা শুধুমাত্র চার ঘন্টার জন্য পড়বে এবং বাকি সময় আবর্জনা থেকে প্লাস্টিক বাছাইয়ের কাজ করবে। তিন বছর বাচ্চারা বিমলা দেবীর বাড়িতে পড়বার পড়ে বাচ্চাদের সংখ্যা যখন প্রায় ১০০ জন হয়ে গেল তখন সেবাভারতীর সাহায্যে বিদ্যালয় তাঁবু খাটিয়ে তার নিচে শুরু হল। বিমলা দেবী পড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বাচ্চাদের গীতার শ্লোক, বাল রামায়ণ, ভজন ইত্যাদি শেখাতেন। এই বাচ্চাগুলি ঢোল তবলা করতাল ইত্যাদি শিখেছিল এই বিদ্যালয় থেকেই। গরমের ছুটিতে তাদের সেলাই, হাতের কাজ ইত্যাদি ঐচ্ছিক ক্লাস করানো হত। জয়পুরে হিন্দু আধ্যাত্মিক মেলায় মঞ্চে যখন এই বাচ্চাদেরই সুন্দর সুরে মধুর কন্ঠে বাল রামায়ণ গাওয়া হচ্ছিল তখন আনন্দে ধনপ্রকাশজীর চোখ জলে ভরে গিয়েছিল। মেলায় পাওয়া অনেকগুলি ট্রফি বাচ্চারা আনন্দের সাথে সবাইকে দেখাত।
বর্তমানে সারদা এনক্লেভ এর দুই তলা ভবনে চলা এই বিদ্যালয়ের ৩২৫ জন ছাত্র ছাত্রীর সম্পূর্ণ খরচ সমাজের সহযোগিতাতেই চলে। ৩৬ জন বাচ্চা এখানকার ছাত্রাবাসে থেকে পড়াশোনা করে। নিজের পরিবার ছেড়ে দিয়ে বিমলা দেবী এখন এখানেই থাকেন যাতে বড় ছেলেমেয়েদের পড়াশোনা বন্ধ না হয়ে যায়। দিদিমা মানে বিমলা দেবী এস.এস.সি. ব্যাংকিং এর মত পরীক্ষা দেওয়াতে বড় ছেলেমেয়েদের সঙ্গে করে শহরে নিয়ে যান। এই বিদ্যালয়ের একটি শাখাও এখন সাংগানের জেলায় বক্সাবলে একটি তাঁবুর নিচে চলছে যেখানে ১২৫ জন বাচ্চা পড়াশোনা করে।
नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।