नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।
প্রবীর রায় | মেহসানা | গুজরাট
বৃক্ষ রোপনে জয়ন্তীভাই।
মিঠা রামের গলা সে সময় ধরে এসেছিল যখন তার অতীতের অন্ধকার সময়ে নিজের অভাবগ্রস্থ শৈশবকালকে হাতরাচ্ছিল। মেহসানাতে ৮ বছরের দাদা, ৬ বছরের ছোট ভাই পিণ্টু এবং মায়ের সাথে, রাস্তার পাশের ফুটপাথকে বিছানা করে আকাশের কম্বল মুরে কুঁকড়ানো অবস্থায় শুয়ে সারা রাত জেগে অজানা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেন। প্রতিদিন ভোরের প্রথম আলো থেকেই অপরাধ ও নেশা থেকে নিজেকে ও ভাইকে বাঁচিয়ে ভাইয়ের ছোট্ট ছোট্ট হাত পেতে অজস্র গালাগালির সাথে সামান্য কিছু পয়সা জোগাড় করত। আজও সে বিশ্বাস করতে পারে না যে একসময় ভিক্ষা করা দুই হাত এখন ভিলওয়ারার দেব নারায়ণ হোটেলে সুস্বাদু খাবার তৈরি করে সবার পেট ভরছে।
গৃহহীন শিশুদের থাকার
জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা করা
তার জীবনের এই অভূতপূর্ব পরিবর্তনের জন্য তিনি ৬৬ বছর বয়সী সঙ্ঘের স্বয়ংসেবক
শ্রী জয়ন্তী ভাই এবং তাঁর স্ত্রী অরুণা বেনের প্রশংসা না করে থাকতেই পারে না।
গুজরাতের এই প্রবীণ দম্পতি, যারা সারা দেশে বন্যা,
ভূমিকম্প, করোনার মতো বহু দুর্যোগে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছেন এবং
দুর্যোগ কবলিত এলাকায় বহুদিন কাটিয়েছেন। তারা বাস্তবিকই সকলের অনুপ্রেরণার
কেন্দ্র। জীবনের গোধূলি বেলায়, যেই বয়সে লোকেরা নিজের
জন্য নিরাপদ আশ্রয় খোঁজে। জয়ন্তী ভাই
এবং অরুণাবেন মেহসাণা গুজরাতে "শিশু ভিক্ষুক মুক্ত শিক্ষিত সমাজ" অভিযান
চালাচ্ছেন।
জয়ন্তী ভাই বলেন যে ২০০০ সাল থেকে মেহসানাতে চলা এই অভিযানকে কেন্দ্র করে আজ প্রায় ২৪৫ টি তাঁবু তৈরি করা হয়েছে। সেই শিশুগুলো যারা একসময় ভিক্ষাবৃত্তি করত; তারা এখন সমাজের সহযোগিতায় এইসব তাঁবুতে থেকে শিক্ষা-দীক্ষা পূর্ণ করছে। তাদের থাকা, খাওয়া আর পড়াশোনার জন্য কোনো টাকা পয়সা নেওয়া হয় না। বর্তমানে এখানে থাকা শিশুরা সমাজবিরোধী কার্যকলাপ ও ভিক্ষাবৃত্তির ফাঁদ থেকে অনেক দূরে থেকে তাদের জীবনকে এক নতুন দিশাতে নিয়ে যাচ্ছে আর সাথে সাথে স্বাবলম্বীও হচ্ছে।
বিবাহ অনুষ্ঠানের অবশিষ্ট খাবার প্রয়োজনীয় ব্যক্তিদের মধ্যে
বিতরণ করা।
গুজরাট প্রান্তের সহ সেবা প্রমুখ অশ্বিন জাডেচা বলেন যে, ১৯৮৪ থেকে ১৯৯২ সাল অব্দি পালনপুরে রাষ্ট্রীয়
স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নগর কার্যবাহ ছিলেন শ্রী জয়ন্তীভাই প্যাটেল। উনি ২০০০ সাল পর্যন্ত
লঘু উদ্যোগ ভারতীর দায়িত্ব পালন করেন। পালনপুরের বিবিধ লক্ষ্যী বিদ্যা মন্দির
বিদ্যালয়ের সভাপতি হওয়ায় তিনি শিশুদের প্রতি অত্যন্ত স্নেহপরায়ন ছিলেন।
আরাবল্লী পর্বতের পাদদেশে বসবাসকারী জনজাতি শিশুদের তীর-ধনুক হাতে নির্বস্ত্র হয়ে
ঘুরে বেড়াতে দেখে এই সেবাপরায়ণ দম্পতির হৃদয় কেঁদে ওঠে।
অরুণা বেন বলেন যে সেই সময়ে, প্রত্যেক বোনের কাছ থেকে প্রতি মাসে ১০ টাকা নিয়ে, তিনি প্রায় ৫০০ বোনের একটি সমিতি গঠন করেন এবং বস্তিতে 'বালক সংস্কার কেন্দ্র' চালু করা হয়। সেই কেন্দ্রটি আজ পালনপুরের উত্তর গুজরাত লোক কল্যাণ ট্রাস্ট নামে পরিচিত। বর্তমানে প্রায় ২৫০ জন জনজাতি শিশু এখানকার ছাত্রাবাসে নিঃশুল্কে সার্বিক উন্নয়নের সুবিধা পাচ্ছে।
শিশুদের জামাকাপড়,
বই ইত্যাদি সামগ্রী প্রদানে জয়ন্তী ভাই এবং
অরুণা বেন।
একজন সত্যিকারের স্বয়ংসেবকের চোখ সর্বদাই সেবার কাজ খুঁজতে থাকে। ২০০০ সালে
মেহসানায় স্থানান্তরিত হওয়ার পর, রাস্তার পাশে ফুটপাতে
বসবাস করা বাচ্চাদের ভিক্ষা করতে দেখে জয়ন্তী ভাইয়ের মন অস্থির হয়ে উঠত। পেটের
খিদে মানুষকে হাত বাড়াতে বাধ্য করে, নইলে ভিক্ষা করতে কারো ভালো লাগে ? এরকম কিছু প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে, ২০০০ সালে জয়ন্তী ভাই তার আশেপাশের বিভিন্ন শহর ও রাজ্যের
৬ থেকে ১৫ বছর বয়সী ১৮ জন শিশুর সাথে কথা বলার পর জেলা কালেক্টরের অনুমোদন নিয়ে,
সরকারি জমিতে ১৬ টি তাঁবু তৈরি করেন, যার মধ্যে ৪৫ জন শিশু তার বাবা-মায়ের সাথে
থাকতে শুরু করে। যেখনে অন্ন, বস্ত্র ও বাসস্থানের
সুবিধা থাকে সেখানে শিশুদের মন সৃজনশীল হতে থাকে। শিক্ষার গুরুত্ব বোঝাতে তাদের
উপযুক্ত বিদ্যালয়ে ভর্তি করান হয়। ৩০০ টিরও বেশি শিশু যারা ভিক্ষা করা ছেড়ে
দিয়েছে তারা এই তাঁবুগুলিতে থাকে এবং বিদ্যালয়েও যায়। প্রতি বছর নিজস্ব উদ্যোগে
তাদের জন্য বিদ্যালয়ের নতুন পোশাক, জুতো, বইয়ের ব্যাগ, খাতা ও বইয়ের ব্যবস্থা খুব উৎসাহের সাথে করেন জয়ন্তী ভাই এবং অরুণা বেন। এর পাশাপাশি বছরে একবার একটি শিক্ষামূলক ভ্রমণেরও আয়োজন করা হয়।
বিগত ২০ বছর ধরে চলতে থাকা এই অভিযান মিঠা রামের মতই ছেলে ও মেয়ে মিলিয়ে ২০০
জনকে কুক, ড্রাইভার, প্লাম্বার এবং বিভিন্ন কারখানায় কাজ করে নিজের
পায়ে দাঁড়ানোর জন্য অনুপ্রেরণা ও কাজ করার সাহস জুগিয়েছে। যারা আজ নিজেদের
স্বাবলম্বী ও সামর্থ্যবান করে গড়ে তোলার পাশাপাশি অন্যদেরও সহযোগিতা করছে। ১০টিরও
বেশি পরিবার আজ তাদের নিজস্ব বাড়িতে বসবাস করেছে আর ২২টি পরিবার একই দিশায় অগ্রসর
হচ্ছে।
একজন সেবাপরায়ণ ব্যক্তির কাছে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রই প্রেরণার কেন্দ্র।
বৃক্ষরোপণ অভিযানকে উৎসাহ প্রদান করার জন্য এবং প্রতি বছর সর্বজনীন স্থানে ২০,০০০ টিরও বেশি গাছ
লাগানোর জন্য শ্রী জয়ন্তী ভাই প্যাটেলকে ২০১৬ সালে গুজরাত সরকার গ্রীন
ব্রিগেডিয়ার সম্মানে ভূষিত করে।
অপরদিকে অরুণা বেন, যিনি খাবারের গুরুত্ব
অনুভব করতে পেরেছিলেন। তার পরিচিতদের বিবাহ অনুষ্ঠান থেকে বেঁচে যাওয়া ভালো খাবার
দেখে একটি নতুন পরিকল্পনার জন্ম দেন এবং ২০১৫ সালে ‘অক্ষয় রথ’ শুরু করেন। যার আওতায়
একটি গাড়ি করে যে কোন বড় অনুষ্ঠান থেকে ভালো খাবার সংগ্রহ করে ২ ঘণ্টার মধ্যে
অভাবগ্রস্থ তথা বস্তিবাসীদের কাছে পৌঁছে দেয়। প্রতিদিন অক্ষয় রথের মাধ্যমে
বিভিন্ন এলাকায় পাঁচশ থেকে পাঁচ হাজার মানুষকে খাবার বিতরণ করা হয়। অক্ষয় রথের
হেল্পলাইন নম্বরের জনপ্রিয়তার ফলাফল এমন যে খাদ্যসামগ্রীর সাথে জরিত সংস্থা এবং
আশেপাশের ৫ থেকে ৬ টি শহরের মানুষ একই উদ্দেশ্যে কাজ করছে। সেবাই সেবার প্রেরণা
জাগায়, তাই আজ জয়ন্তী ভাইকে
দেখে মেহসাণায় প্রায় ৬০ জন মানুষ নিঃস্বার্থভাবে সেবাকাজে সহযোগিতা করছে।
হাজার হাজার মানুষ আছে যারা বলে "ভিক্ষা করা উচিৎ নয়", কিন্তু তাঁবু টাঙিয়ে
আশ্রয় প্রদানকারী, হাত ধরে আত্মসম্মান এবং
আত্মনির্ভরতার পথ প্রদর্শনকারী, এবং সমস্যাকে নির্মূল
করার মত দেশভক্ত, সমাজসেবী অত্যন্ত দুর্লভ।
नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।