नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।
রোহিনী চ্যাটার্জী | തെലങ്കാന
বছর পনেরর ভীত সন্ত্রস্ত একটি মেয়ে বেঞ্চের উপর বসে মায়ের আঁচলে নিজেকে
লুকানোর চেষ্টা করছে আবার কখনও ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছে। মায়ের অবস্থা আরও
শোচনীয়, চোখে মুখে একটা অসহনীয়
যন্ত্রণা, যেন তার সব কিছু কেড়ে
নেওয়া হয়েছে। আমীরপেট, হায়দ্রাবাদের ব্যস্ততম
রেলওয়ে জংশনগুলির মধ্যে একটি, যেখানে সমস্ত মানুষ তাদের
নিজ নিজ কাজের অছিলায় না দেখার ভান করে এগিয়ে চলেছে, কিন্তু এক সম্ভ্রান্ত মহিলা কিছু না বললেও তাদের ব্যথা
বুঝতে পেরেছিলেন। এই মহিলা ছিলেন তেলেঙ্গানা সেবাভারতীর প্রান্ত সম্পাদক জয়াপ্রদা
দিদি। দিদি যখন মা-মেয়ের কাছ থেকে তাদের সেই ভয়ঙ্কর নৃশংসতার ঘটনা শুনলেন,
তখন তিনি একেবারে শিউরে উঠলেন। একজন অটো চালক
জোর করে মেয়েটিকে তুলে নিয়ে গিয়েছিল, তার দু’দিন পর এখানে ফেলে চলে
যায়।
কীভাবে তাদের সাহায্য করব? এই প্রশ্নের উত্তরের খোঁজে দিদির মনে প্রথমেই সঙ্ঘের কথা মাথায় আসে, তখনই সঙ্ঘ কার্যালয়ের দিকে রওনা হন। প্রশ্ন শুধু এই মেয়েটির নয়, বস্তিতে বসবাসকারী হাজার হাজার মেয়ের। যাদের শিক্ষা, প্রগতি এবং আত্মরক্ষার কৌশল শিক্ষার খুবই প্রয়োজন ছিল। তখন তৎকালীন কার্যকর্তারা পরিকল্পনা করেন, সেবা বসতিতে কিশোরী মেয়েদের সার্বিক উন্নয়নে সংগঠনটি নতুন প্রকল্প শুরু করবে। এই সমস্যাটির গুরুত্ব বুঝতে পেরে, তৎকালীন ক্ষেত্র সেবা প্রমুখ পাটোলা রামা রেড্ডি এবং প্রান্ত সঙ্ঘচালক প্রতি সপ্তাহে বৈঠক করে কিশোরী বিকাশ কেন্দ্রের সম্পূর্ণ পরিকল্পনাটি গড়ে তোলেন।
এর জন্য যেসব বসতিগুলোতে শিশু সংস্কার কেন্দ্র চালু রয়েছে সেখানেই দৈনিক
কিশোরী বিকাশ কেন্দ্র চালনোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পরিণামস্বরূপ এক নতুন সেবা
যাত্রার সৃষ্টি হয়। ২০০৪ সালে, ভাগ্যনগরের নাগৌল এবং
ইব্রাহমপুরায় ১০টি কিশোর বিকাশ কেন্দ্র চালু করা হয়, যার সংখ্যা ২০২২ সাল অব্দি ২৯৩জন। এই কেন্দ্রগুলি বিগত ১৮
বছরে হাজার হাজার কিশোরীদের শক্তিশালী ভবিষ্যতের ভিত্তি গড়ে দিয়েছে।
ভাগ্যনগরের একটি ছোট্ট বসতিতে বসবাসকারী সারবানি শৈশবেই তার বাবাকে হারায়। তার মা কেবল বেঁচে থাকার মত সামান্যই উপার্জন করত। এই মেধাবী মেয়েটি হয়তো তার লেখাপড়া শেষ করতেই পারত না যদি সে তার বসতিতে চলা কিশোরী বিকাশ কেন্দ্রে দৈনিক দুই ঘণ্টা পড়াশুনা না করত। এখানে পড়াশোনা করার পর, সে প্রথমে তার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয় এবং তারপর কয়েক বছর কেন্দ্রে শিক্ষিকা হিসাবে কাজ করে যে বেতন পায় তা দিয়ে সে বি.টেক করে। আজ সারবানি একটি নামী আইটি কোম্পানিতে কাজ করছে। তার চাকরির পাশাপাশি সেবাভারতী তেলেঙ্গানার সাথে যুক্ত হয়ে কিশোরী বিকাশ কেন্দ্রগুলিতেও সহযোগিতা করছে। এখন কবিতার কথা বলি... কবিতার গল্পটা সিনেমার নায়িকার মতোই আকর্ষণীয়। মাত্র ১২ বছর বয়সে তার বিয়ের আয়োজন করা হয়। ভাগ্যনগরের কোরবানী টাণ্ডায় বসবাসকারী এই মেয়েটি হয়তো বহু বছর ধরে এই এলাকায় চলে আসা বাল্যবিবাহের কুপ্রথার শিকার হয়ে যেত যদি না সময় মত সেবাভারতীর কার্যকর্তারা তার পরিবারের সদস্যদের মেয়ের শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে সফল হতেন। বর্তমানে কবিতা হায়দ্রাবাদের একটি স্বনামধন্য স্কুলে যোগ ও নৃত্যের শিক্ষিকা।কিশোরী বিকাশ কেন্দ্রের সমন্বয়কারী হিসেবে কাজ করে সমাজ থেকে যা পেয়েছে তাই সমাজকে ফিরিয়ে দিচ্ছে।
এটি শুধু কবিতার সাথেই নয়, জয়াপ্রদা দিদি বলেন যে
কিশোরী বিকাশ কেন্দ্রে পাঠরত মেয়েরা অন্যান্য মেয়েদের ভবিষ্যত গড়তে বস্তিতে
তরুণী বিকাশ কেন্দ্র চালু করে। সেবা তাদের জীবনের এমন অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে
যে এখন তারা সেবাভারতী মাতৃমণ্ডলীর সাথে একসাথে কাজ করছে। করোনার সময় জীবনের
পরোয়া না করে রেশন বিতরণ থেকে স্যানিটাইজেশন, ওষুধ বিতরণ ইত্যাদি যাবতীয় কাজে সার্বিক সহযোগিতা করেছে।
কিশোরী বিকাশ কেন্দ্রগুলি কী তা বোঝা যাক। দক্ষিণ মধ্য ক্ষেত্রের ক্ষেত্র সেবা প্রমুখ চন্দ্রশেখর এক্কা বলেন যে এই কেন্দ্রগুলিতে প্রতিদিন ২ ঘন্টা বিদ্যালয় থেকে দেওয়া বাড়ির কাজ করানো, স্বাস্থ্য সচেতনতা, আত্মরক্ষার কৌশল প্রশিক্ষণের পাশাপাশি সেলাই, কারুকাজ এবং উৎসব-অনুষ্ঠানের জন্য প্রতিমা তৈরি করাও শেখান হয়। একজনকে স্বাবলম্বী করতে দেওয়া হয়।যেমন বৃত্তিমূলক প্রশিক্ষণও দেওয়া হয়হয়। এই কেন্দ্রগুলি কিশোরী মেয়েদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ে সচেতন করে তোলে। তাদের যা যা শেখানো হয় তা তাদের পরিবারেও শেখাতে পারে না। ভাল এবং খারাপ স্পর্শের মধ্যে পার্থক্য করা, কীভাবে সমাজের প্রতিকূলতার সাথে সাহসের সাথে লড়াই করতে হয়, কীভাবে নিজেকে রক্ষা করতে হয় এমন সবকিছুই শেখানো হয়। শিক্ষার পাশাপাশি শুধু ভালো মূল্যবোধই নয়, দেশভক্তির বোধ জাগ্রত করা হয়। কেবল টিউশন সেণ্টারের মতো মনে হলেও বাস্তবে এই কেন্দ্রগুলি এমন শক্তিশালী নারী তৈরি করছে যারা দেশকেও ভালবাসে এবং সমাজের প্রতিও চিন্তাশীল।
এই কেন্দ্রগুলি চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ বৈদেহী চ্যারিটেবল ট্রাস্ট এবং
সমাজ থেকে সংগ্রহ করা হয়। এর জন্য হায়দ্রাবাদে প্রতি বছর ‘রান ফর আ গার্ল চাইল্ড’ নামে একটি বিশাল সুস্বাস্থ্য সম্বন্ধীয় কার্যক্রমের আয়োজন
করা হয় এই সমস্ত মেয়েদের সমস্যা সম্পর্কে সমগ্র সমাজকে সচেতন করার উদ্দেশ্যে।
রমা, কল্পনা এবং মীনার মত
বৈবাহিক বোনেরা এই কেন্দ্রগুলিকে তাদের দ্বিতীয় বাড়ি বলে মনে করে। এই দলটি
শুধুমাত্র কোরবানী টাণ্ডাতেই ২০ টিরও বেশি মেয়ের বাল্যবিবাহ বন্ধ করেছে। এখন,
সেবা ভারতীর সহায়তায়, এই মেয়েদের আইটি প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে।
এই কেন্দ্রগুলি যেখানে কাজ করে সেখানেও পরিবর্তনের বাতাবরন স্পষ্ট অনুভব করা
যায়। হায়দ্রাবাদের মহাত্মা গান্ধী নগর এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। জুয়া ও মাদকের
সাম্রাজ্যের কারণে এই কলোনীতে প্রতিদিনই কিশোরীদের শ্লীলতাহানির খবর পাওয়া যায়।
এখানে চলা কিশোরী বিকাশ কেন্দ্র শুধু মেয়েদের সক্ষম ও স্বাবলম্বী করেনি বরং
পুরো বসতির চিন্তাধারাকেও বদলে দিয়েছে। এখানে অনেক যুবক মদ ও জুয়া ছেড়ে
দিয়েছে। একসময় মদের নেশায় আসক্ত এই যুবকরা কেন্দ্রের জন্য ছাউনি তৈরির উদ্যোগ
নিয়েছে এবং এখানে একটি মন্দির নির্মাণের জন্যেও সচেষ্ট। শুধু তাই নয়, এই কেন্দ্রের সাফল্যে প্রভাবিত হয়ে ওই এলাকায়
আরও ৮০টি কেন্দ্র শুরু হয়েছে। কিশোরী বিকাশ কেন্দ্রের সক্ষম মেয়েরা জীবনে নতুন
প্রত্যাশা নিয়ে দেশে নতুন প্রভাতের শঙ্খধ্বনি করছে।
যোগাযোগ:- জয়াপ্রদা দেবী
মোঃ নং। :- 9000755570
नियमित अपडेट के लिए सब्सक्राईब करें।