सब्‍सक्राईब करें

क्या आप ईमेल पर नियमित कहानियां प्राप्त करना चाहेंगे?

नियमित अपडेट के लिए सब्‍सक्राईब करें।

একটি গ্রাম যে নিজের ভাগ্য নিজেই লিখেছে

প্রবীর রায় | বারীপাড়া | মহারাষ্ট্র

parivartan-img

এই গল্পটি এমন একটি গ্রামের যেখানে তার নিজের ভাগ্য নিজেই লিখেছে। মহারাষ্ট্রের ধুলিয়া জেলার সাক্রী ব্লকের মাত্র ৯৪টি পরিবারের এই বনবাসী গ্রাম(Tribal Village) প্রমাণ করে দিয়েছে যে যদি মানুষ প্রকৃতির সাথে বন্ধুত্ব করে তাহলে তার অভাব সারা জীবনের মত ঘুচে যায়। এটা গ্রামবাসীদের সংগঠিত প্রচেষ্টারই ফল এই যে, একসময় যে গ্রাম এক ফোঁটা জলের জন্য হাহাকার করত সেই গ্রামই এখন আশেপাশের ৫টি গ্রামকে পানীয় জল সরবরাহ করছে। যে গ্রামে কোনো এক সময়ে কেবলমাত্র ১৫ হেক্টর জমি কৃষি যোগ্য ছিল আজ সেখানে ১২০ হেক্টর জমিতে বছরে তিন ফসলি চাষাবাদ হচ্ছে। পেঁয়াজ, ডাল এবং স্ট্রবেরির মত বাণিজ্যিক ফসল উৎপাদন হওয়ার ফলে আজ এই গ্রামের কোন পরিবার গরিব নেই। পরিবর্তনের এই ইতিহাস লিখেছেন এই গ্রামেরই বাণিজ্য বিভাগে স্নাতকোত্তর এক বনবাসী  যুবক চৈতরাম পাওয়ার। বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের প্রেরণা সহযোগিতার দ্বারা এই পরিবর্তনের সূচনা বন সংরক্ষণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়। গ্রামবাসীরা বন দপ্তরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বারীপাড়ার আসে পাশের ৪৫০ হেক্টর জমির ওপর বিস্তৃত জঙ্গল কে পুনরায় সবুজ করে তোলে। যা 'ইন্ডিয়া বায়ো ডাইভার্সিটি' সম্মান এবং ২০০৩ সালে 'ইউনাইটেড নেশন ডেভেলপমেণ্ট প্রোগ্রাম' সহ ৩৩টি অন্যান্য সম্মানে সম্মানিত এই গ্রামের সমৃদ্ধির দুয়ার খুলে দেয়।


যদি ৮০' দশকের কথা বলি তাহলে কোকণী ভীল জনজাতির এই গ্রামে দীপাবলির পর জল শেষ হয়ে যেত। সেই সময় বারীপাড়ায় কেবলমাত্র দুটি  কুঁয়ো ছিল যেগুলি ডিসেম্বর আসতে না আসতেই পুরোপুরি শুকিয়ে যেত। বাধ্য হয়ে গ্রামবাসীরা রোজগারের উদ্দেশ্যে ছয় মাসের জন্য গ্রাম ছেড়ে চলে যেত। যেসময় তারা গ্রামেই থাকত সেই সময়ও কেবলমাত্র কৃষিকাজ করে তাদের পরিবারের ভরণপোষণ হতো না। অবৈধ ভাবে গাছ কেটে আর মহুয়া দিয়ে মদ বানিয়ে বিক্রয় করার মত অবৈধ কাজ করে তাদের সংসার চলত। এই কাজে বেশিরভাগ মহিলারাই কর্মরত ছিল।

বারীপাড়া গ্রাম থেকে কিলোমিটার দূরে অবস্থিত বার্সা গ্রামের কল্যাণ আশ্রমে নিরন্তর বছর ধরে চলতে থাকা চিকিৎসা কেন্দ্রের সঞ্চালক তথা সঙ্ঘের প্রচারক ডা. আনন্দ ফটক জানিয়েছেন যে "গ্রামের কোন বাচ্চাই নিয়মিত পড়াশোনা করতে পারত না কারণ ছয়মাস তো লোকজন গ্রামেই থাকত না। বাড়ির মহিলাদের কয়েক মাইল দূর থেকে জ্বালানির জন্য কাঠ কেটে আনতে হত। তা দিয়েই তাদের বাড়িতে উনুন জ্বলত। শুধু তাই নয়, গ্রাম থেকে কিছুটা দূরে নদীর কাছে খনন করা গর্তের মধ্যে নদী থেকে যে জল আসত সমস্ত গ্রামবাসী সেই জলই ব্যবহার করতে বাধ্য ছিল।"


এই পরিবর্তন তখন শুরু হয়েছিল যেদিন চৈতরাম জী ডা. আনন্দ জীর সাথে কল্যাণ আশ্রমের কার্যকর্তারা গ্রামের মানুষদের নিয়মিত কথাবার্তা বলে তাদের বোঝাতে সক্ষম হয় যে উন্নতি করতে গেলে কখনো বিনাশের পথে থেকে তা সম্ভব নয়। তারপর যেটা হল, বনবাসীরা ওই বন-জঙ্গলকেই নিজের বন্ধু বানিয়ে নিল আর বিলুপ্ত হতে থাকা বনজ সম্পদকে বাঁচানোর জন্য বন দপ্তরের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে চলতে লাগল। চৈতরাম জী বলেন যে, "গ্রামের বয়স্ক ব্যক্তিরা এক এক করে ফরেস্ট গার্ডের ভূমিকা পালন করেছেন। অবৈধ ভাবে গাছ কাটা আটকানোর জন্য গ্রামের মানুষজন মাথায় করে কাঠ বহনকারীদের জন্য, গরুর গাড়ি করে কাঠ বহনকারীদের জন্য আর কাঁচা কাঠ কাটা ব্যক্তিদের জন্য আলাদা-আলাদা জরিমানার ঘোষণা করা হয় এবং আদাই করাও শুরু হয়।

তো সবেমাত্র শুরু, তারপর গ্রামের লোকেদের কোনদিন পেছনে ফিরে তাকাতে হয় নি। এরপর ছিল গ্রামে জল আনার পালা। বনদপ্তরের সহযোগিতায় গ্রামবাসীরা জল সংরক্ষণের জন্য স্বেচ্ছায় শ্রমদান করে ছোট ছোট চেকড্যাম বানায়। এই ৩০ বছরে গ্রামের মধ্যে ওয়াটারশেড ম্যানেজমেণ্টের প্রায় ৬০০টি কাজ হয়েছে। যার ফলস্বরূপ বর্তমানে গ্রামে ৪০টি কুঁয়ো রয়েছে যেগুলিতে সারা বছর জল থাকে। শুধু তাই নয়, গ্রাম সমিতি প্রত্যেক বাচ্চার পড়াশোনা অনিবার্য ঘোষণা করেছে। বাচ্চাদের বিদ্যালয়ে না পাঠানো পরিবারগুলো জরিমানা থেকে বাঁচার জন্য বাচ্চাদের নিয়মিত ভাবে সরকারি বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য পাঠাতে শুরু করেছে।

গ্রামের মহিলাদের স্বাবলম্বী করে তোলার জন্য বনবাসী কল্যাণ আশ্রমের কার্যকর্তাদের মার্গদর্শনে ১৫টি স্বনির্ভর গোষ্ঠী(SHG) বানানো হয়েছে। গ্রামের পুকুর গুলোতে মাছ চাষ শুরু হয়েছে। বারীপাড়ার বিখ্যাত চাল বাজারজাত করার জন্য "ফার্মার্স প্রোডিউসার কোম্পানি" তৈরি করা হয়েছে যেটি এখন আশেপাশের জেলাগুলোকে চাল সরবরাহ করে। যেই গ্রামের শিশুরা চতুর্থ শ্রেণীও পাশ করত না, সেখানে সুনীল পাওয়ার অভিমত পাওয়ারের মত যুবকেরা পড়াশোনা করে সরকারি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করছে।

এখানকার এক বিশেষ মহোৎসব যা প্রায়ই খবরের শিরোনামে থাকে, গত ১৮ বছর ধরে নিয়মিত চলতে থাকা বারীপাড়ার "বনভাজী মহোৎসব" এক প্রজন্ম থেকে আরেক প্রজন্মে জ্ঞান হস্তান্তরনের এক অভিনব উদাহরণ। সেই জঙ্গলে উৎপন্ন হওয়া সব্জির রেসিপি কম্পিটিশনে অংশগ্রহণকারী মহিলাদের সেই সব্জিগুলোর ঔষধীয় গুণাগুণও বলতে হয়। কানাডায় পি.এচ.ডি অধ্যয়নরত শৈলেশ শুক্লা এখানে অধ্যয়ন করার জন্য এসেছিলেন; তখন এই বন মহোৎসব শুরু করিয়েছিলেন। যাতে বনবাসিদের কাছে থাকা বিভিন্ন বণৌষধের ঔষধীয় মূল্য জ্ঞান রয়েছে তা এক প্রজন্ম থেকে পরবর্তী প্রজন্মে হস্তান্তরিত করা যেতে পারে।

যখন চৈতরাম জী গর্ব করে গ্রামবাসীদের সামনে বলেন যে "আপনারা ৬০০০ কোটি টাকার মালিক" তখন শুনে একটু আশ্চর্য লাগলেও লাগতে পারে, কিন্তু বারীপাড়ার এই জঙ্গলের বনসম্পদ, যেটা গ্রামবাসীরা পুনর্জীবিত করেছেন তার মূল্য বাস্তবে এতটাই। এখানে সেগুন কাঠের শতাধিক গাছ আছে। আজ সেগুন গাছ কাটা বনদপ্তর নিষেধ করেছে কিন্তু ভবিষ্যতে তার মধ্যে থেকে কিছু সেগুন গাছ যখন ছাঁটাই করা হবে তখন তা থেকে প্রাপ্ত অর্থের অর্ধেক রাশি বারীপাড়ার জনগণকে দেওয়া হবে, এটা বন দপ্তর নিশ্চিত করেছে। আর হ্যাঁ, আরও একটা কথা যা ডা. আনন্দ ফটক গর্বের সাথে বলেন যে, যেই দেশে আজও পুরুষ ফ্যামিলি প্ল্যানিং অপারেশন করাতে সঙ্কোচবোধ করেন, সেখানে এই গ্রামের বেশিরভাগ পুরুষই এই অপারেশন করিয়েছেন।

সম্পর্ক:- চৈতরাম জী, বারীপাড়া

চলভাষ:- 9823642713

367 Views
अगली कहानी